ক্রাইম রিপোর্টারঃ প্রায় দশ মাস পর কুয়েত প্রবাসী সংগঠক এস এম আব্দুল আহাদ হত্যা মামলায় ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ৩১শে আগস্ট আহাদ হত্যার এক বছর পূর্ণ হলেও এখনো আহাদ হত্যাকারী পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি এবং মামলার অগ্রগতি আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ করেন আহাদ হত্যা মামলার বাদী পক্ষ।
কুয়েত আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট বিভাগীয় লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরামের সহ-সভাপতি বাংলাদেশে স্বল্পকালীন ছুটিতে এসে ২০১৮ সালের ৩১শে আগস্ট জিন্দাবাজার তাঁতীপাড়ার গলির মুখে নৃশংস খুনের শিকার হোন।
এস এম আব্দুল আহাদ হত্যাকাণ্ডের পর কুয়েত আওয়ামীলীগ, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম, কুয়েত প্রবাসী সিলেট কমিউনিটি সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়, পাশাপাশি বাংলাদেশেও আহাদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করার দাবিতে মানবন্ধন করেন নিহত আহাদের এলাকার সকল শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ।
কুয়েত আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আব্দুল আহাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রবাসী এ সংগঠকের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও গণ পরিষদ সদস্য, বয়োজ্যেষ্ঠ বরেণ্য রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ফজলুর রহমান ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট, আহাদ খুনের এক দিন আগে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সিলেটে এক জনসভায় আহাদের যোগদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আহাদ আমাদের আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ ও নিষ্ঠাবান একজন কর্মী ছিল, আমরা তাকে হারিয়ে অবর্ণনীয় ব্যথিত।
মেয়র ফজলুর রহমান, আহাদ হত্যায় জড়িত খুনিদের শাস্তি দাবি করেন।
আহাদের বড় ভাই মোশাহিদ আহমেদ বলেন, আমার ভাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জেবিত একজন সৈনিক ছিল, দেশে এবং বিদেশে থাকাকালীনও পরিবারকে সময় না দিয়ে সংগঠনের জন্য সময় দিয়েছে, সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছে আওয়ামীলীগের জন্য।
আফসোস করে মোশাহিদ বলেন, একজন মুজিব সৈনিকের হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি এরকম বিলম্বিত হয়, তাহলে আমরা যাবো কোথায়?
স্বামীহারা বাকরুদ্ধ, বিলাপ করে এস এম আব্দুল আহাদের স্ত্রী তিনটি অবুঝ সন্তানকে নিয়ে চরম অসহাত্বের কথা জানান।
তিনি বলেন, আমার সন্তানরা ছাড়া এজীবনে আমার পাশে থাকার আর কেউই রইলো না।
স্বামী খুনের বিচার দাবি করেন আহাদের স্ত্রী ও সন্তানরা।
২০১৮ সালের ৩১শে আগস্ট শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিন্দাবাজারের তাঁতিপাড়া গলির মুখে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা কুয়েত প্রবাসী সংগঠক ও কলম সৈনিক এস এম আব্দুল আহাদকে।
এর আগের দিন ২০১৮ সালের ৩০ শে আগস্ট সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন প্রবাসী নেতা এস এম আব্দুল আহাদ।
পরে ২ সেপ্টেম্বর এস এম আব্দুল আহাদের স্ত্রী রাসনা বেগম বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
সেই মামলায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সাধুর বাজারের তারা মিয়ার ছেলে ফখরুল ইসলাম শান্ত (৩৬), বিয়ানীবাজারের মাথিউরা বাজারের আব্দুল মালিকের ছেলে মাহমুদুর রহমান লায়েক (২৮), গোলাপগঞ্জের উত্তর রায়গড়ের কামরুল হাসানের ছেলে মুরাদ হোসাইন রানা (২৫), ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুরের ফিরোজ আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ জালাল (২৭), বিয়ানীবাজারের চারখাই জালালনগরের ময়নুল হোসাইন চৌধুরীর ছেলে হোসেন মুরাদ চৌধুরী (৪১) এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সূর্যেরগাঁওয়ের আশীষ কুমার চক্রবর্তীর ছেলে অভিষেক চক্রবর্তী মিথুন (২৫)। তাদেরকে দন্ডবিধির ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
অবশেষে প্রায় দশ মাস পর উপরোক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।